পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : আমতা – সময়টা বিংশ শতাব্দীর তিনের দশক।ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ,পূর্ব থেকে পশ্চিম যখন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।একদিকে সুভাষ চন্দ্র বসু;পক্ষান্তরে মহাত্মা গান্ধীর গোষ্ঠীর মধ্যে অঘোষিত চরম দ্বন্দ্ব।যদিও কংগ্রেসের সাধারণ কর্মীদের সমর্থনে মহাত্মা গান্ধীর স্নেহধন্য পট্টভি সিতারামাইয়াকে পরাজিত করে কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আপামর ভারতবাসীর নয়নের মণি ভারতের যুব সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টা সুভাষচন্দ্র বসু।কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে কংগ্রেসের নরমপন্থী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব ক্রমাগত চলতে থাকে।সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস ত্যাগ করে ১৯৩৯ সালে গঠন করলেন ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’।তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলার অগণিত মানুষ বিশেষত ছাত্র-যুব সম্প্রদায় ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে স্বাধীনতার অঙ্গনে নামলেন।এরকমই এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলার ছাত্র-যুবকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১ লা মে পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।যাত্রাপথে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ছাত্র-যুব ও স্থানীয় নেতা নানু ঘোষের প্রচেষ্টায় নেতাজীকে গণ সম্বর্ধনায় সম্বর্ধিত করা হয়। এরমাত্র ৩ দিন পরেই সুভাষচন্দ্র বসু পা রাখেন উলুবেড়িয়ার মাটিতে।গ্রামীণ মানুষজনের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ জাগিয়ে তুলতে সভা করেন উলুবেড়িয়া গরুহাটার মাঠে।তারপর দিন অর্থাৎ, ১৯৪০ সালের ৫ ই মে ভারতের আবালবৃদ্ধবনিতার নয়নের মণি,কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নদ্রষ্টা,ভারতের স্বাধীনতার মুক্তিসূর্য সুভাষচন্দ্র বসুর পাদস্পর্শে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাগনান।উলুবেড়িয়া থেকে তৎকালীন মোটরে চেপে বাগনানে আসেন এই মহান বঙ্গতনয়।তিনি বাগনানে অগণিত স্বাধীনচেতা মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেন,”Country men prepare for struggle”।নেতাজীর বাগনান ও উলুবেড়িয়ার এই সভার খবরে মুখরিত হয়ে ওঠে ‘হিন্দুস্থান টাইমস’ ও ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’।হেডলাইনে উদ্ভাসিত হয় নেতাজীর সভার খবর।কিন্তু,এর মাঝেই আবার সুভাষচন্দ্র বসু উলুবেড়িয়া না বাগনান প্রথম কোথায় আসবেন তা নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে প্রবল বিরোধের সৃষ্টি হয়।যদিও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নানু ঘোষের প্রভাবে নেতাজী প্রথমে উলুবেড়িয়া ও তারপর দিন বাগনানে সভা করেন।এভাবেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু গ্রামীণ হাওড়ার মানুষের মধ্যে স্বাধীন ভারতের সুপ্ত স্বপ্নকে জাগরিত করেন।তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়,বিশ্ববরেণ্য বীর বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসুর পাদস্পর্শে ধন্য হয়ে ওঠে উলুবেড়িয়া ও বাগনানের মাটি।আজও সেই সুখস্মৃতিকে বয়ে চলেছে উলুবেড়িয়া ও বাগনানের মাটি।
আজও নেতাজীর স্মৃতি বয়ে চলেছে উলুবেড়িয়া ও বাগনানের মাটি
Updated on: