নিজস্ব সংবাদদাতা : বেশ কিছু বছর আগে পর্যন্ত কালিপুজোর সময় বাড়ি সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হতো মাটির প্রদীপ। মাটির প্রদীপে তেল ঢেলে সলতে লাগিয়ে আলোকিত করা হতো বাড়ি। দিন বদলেছে। মাটির প্রদীপের পরিবর্তে নানারকম ইলেকট্রিক লাইট ব্যাবহার করে ঘর সাজানো শুরু করেছে আম মানুষ। মাটির প্রদীপের চাহিদা কমতে থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছেন এই ব্যাবসার সাথে যুক্ত শিল্পীরা। তাদের দাবি ইলেকট্রিক লাইট এসে যাওয়ার পর থেকে দিনকে দিন কমছে মাটির প্রদীপের চাহিদা। ফলত কাজ হারাচ্ছে এই শিল্পের সাথে যুক্ত বহু শিল্পী। উলুবেড়িয়ার বাগান্ডা এলাকায় এক সময় ঘর ঘর তৈরি করা হতো মাটির প্রদীপ, দেবী ঘট, জাঁক হাঁড়ি, মাটির ভাঁড় সহ বিভিন্ন মাটির তৈরী জিনিস।
এখন পেশা পরিবর্তন করে নিয়েছে বহু পরিবার। তাদের দাবি আগে শুধু কালিপুজোর সময় মাটির প্রদীপের যে চাহিদা থাকতো, এখন সারা বছরেও তার দশ ভাগ চাহিদা থাকেনা। ফলত বাধ্য হয়ে অন্য পেশার সাথে যুক্ত হয়েছেন তারা। বাগান্ডার এক শিল্পী উত্তম পাল বলেন বাজারে নানারকম ইলেকট্রিক আলো চলে আসায় মাটির প্রদীপের চাহিদা তলানিতে ঠেকেছে। আগে আট থেকে দশ লক্ষ প্রদীপ তৈরি করতাম। এখন সেটা দাঁড়িয়েছে তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজারে। তিনি আরো বলেন এর পাশাপাশি মাটির সমস্যা রয়েছে। কাছাকাছি মাটি পাওয়া যাচ্ছেনা। দুর থেকে মাটি আনতে খরচ হচ্ছে অনেক বেশি। তার দাবী আগে তার কুড়ি জন কর্মচারী থাকলেও এখন সংখ্যাটা তিনে দাঁড়িয়েছে।
লাভ না থাকায় নতুন করে কেউ আর এই শিল্পের সাথে যুক্ত হতে চাইছেনা বলেও তিনি জানান। আর এক শিল্পী সুনীল মন্ডল বলেন আগে সারাবছর ধরে কাজ করে শেষ করতে পারতাম না। এখন কালিপুজোর সময় এক মাস যে কাজ করি, তার অর্ধেক মাল পড়ে থাকে। বিক্রি করতে পারিনা। এই শিল্পের সাথে যুক্ত নিরাপদ পাল বলেন মাটির প্রদীপের চাহিদা তলানিতে ঠেকে যাওয়ার পাশাপাশি তুবড়ির খোল বিক্রিও প্রায় বন্ধ। কারণ হিসাবে তিনি বলেন তুবড়ির মশলা নিয়ে সরকারের কড়াকড়ির কারণে তুবড়ির মশলা পাওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণেই মানুষ তুবড়ি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ায় তুবড়ির খোলের চাহিদা প্রায় নেই বললেই চলে। এই সমস্ত শিল্পীদের দাবি সরকার তাদের প্রতি সদয় না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে এই প্রাচীন শিল্প।