নিজস্ব সংবাদদাতা : সরকারি অর্থানুকূল্যে পরিচালিত বেসরকারি হোমে থাকা এক কিশোরকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল। মারধরের ফলে ওই কিশোরকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনার জন্য হোমের সুপারিনটেনডেন্টকে দায়ী করে কিশোরের মা ,ভাই সহ এলাকার লোকজন বুধবার হোমের সামনে বিক্ষোভ দেখান। এই বিষয়ে ওই কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে হোম কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গ্রামিন হাওড়ার পাঁচলা থানার মালিপুকুর সমাজ উন্নয়ন হোমে।পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থানার সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সারদাবসান গ্রামের বছর চৌদ্দর শাহজাহান বাদশা শনিবার বাাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। শাহজাহান কথা বলতে পারে না কানে খুবই কম শুনতে পায়। শাহজাহানকে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান চালান। মোবাইলে শাহজাহানের ছবি আপলোড করে দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে নিখোঁজ কিশোরের পরিবার সন্ধান পান যে, তাদের ছেলে গ্রামিন হাওড়ার বাগনান থানায় আছে। রবিবার শাহজাহানের আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজন বাগানান থানায় আসেন। ততক্ষনে বাগনান থানা কর্তৃপক্ষ শাহজাহানকে পাঁচলা থানার মালিপুকুর হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই খবর পেয়ে শাহজাহানের আত্মীয় ও অন্যান্য লোকজন মালিপুকুর হোমে যান। সাগরবাড় এলাকার সমাজকর্মী সেখ সাদেক বলেন, মালিপুকুর হোমের সুপারিনটেনডেন্ট উজ্জ্বল নন্দি তাদের জানান, প্রথমতঃ রবিবার হওয়ায় হোম থেকে কোন বাচ্চাকে ছাড়া যাবেনা। দ্বিতীয়তঃ তাদের বাচ্চাকে নিতে গেলে সমাজকল্যান দপ্তরের লিলুয়া হোম থেকে অনুমতি নিতে হবে। সাদেক বলেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে লিলুয়ায় যাই। লিলুয়ার আধিকারিকরা সোমবার মালিপুকুর হোম থেকে শাহজাহানকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় বলে সাদেক বলেন। শাহজাহানের মা জাহানারা খাতুন বলেন, মালিপুকুর হোমে রবিবার গিয়েছিলাম। ছেলেকে দেখে এসেছি। সেদিন ছেলে স্বাভাবিক ছিল। সোমবার হোমে অনেক সময় অপেক্ষা করার পর আমার ছেলেকে যখন নিয়ে আসা হলো, তখন দেখি ছেলে চলতে পারছে না। তার চোখ ও মুখের বিভিন্ন অংশে ফোলা দাগ। ছেলে চোখ খুলতে পারছে না। এই অবস্থায় তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে ছেলের অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে।
এই অবস্থায় পাড়ার লোকজনের সহযোগিতায় তার ছেলেকে তমলুক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তমলুক হাসপাতাল থেকে ছেলেকে কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে ” রেফার” করেছে। ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পয়সা নেই বলেন জাহানারা। চার সন্তানের জননী জাহানারা বলেন, আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কি করব বলতে বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন জাহানারা।এই ব্যাপারে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সমাজকর্মী সাদেক বলেন, মঙ্গলবার তিনি মালিপুকুর হোমের সুপারিনটেনডেন্ট উজ্জ্বল নন্দির সাথে কথা বলি। উজ্জ্বলের কথাবার্তায় অসঙ্গতি লক্ষ্য করি বলেন সাদেক।এই সব কারনে ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে সাগরবাড় থেকে শতাধিক পুরুষ ও মহিলা বুধবার পাঁচলা থানাতে গিয়ে শাহজাহানের বাবা সেখ মোস্তফা ও মা জাহানারা হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সাগরবাড় এলাকার মানুষজন মালিপুকুর হোমের প্রধান ফটকের সামনে বসে পড়েন। হোমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকার কারনে হোম কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে না পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। পরে তারা এই হোমের প্রতিষ্ঠাতা রফিক মিদ্যার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে বিক্ষোভকারিরা বলেন, আজ দেখা করলেন না। আগামি দিনে তারা দশ হাজার লোক নিয়ে আসবেন সুবিচারের আশায়।এদিকে হোম কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন উত্তর দেননি।এই বিষয়ে হাওড়ার জেলা শাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়। জেলাশাসক মুক্তা আর্য্য বলেন, ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।