পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : দেড় বছর প্রায় অতিক্রান্ত। এখনো পিছু ছাড়েনি করোনা। করোনার ভ্রুকুটির জেরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাচ্চাদের নিয়ে পুজো প্যান্ডেলে গিয়ে ঠাকুরদেখা, ঘুরেবেড়ানোও কার্যত সমস্যার। তার উপর দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতির জেরে বাড়ির আত্মীয়স্বজনদের সাথে বহুদিন দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। তাই এবার বাড়িতেই দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নিল গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান থানার নুন্টিয়া গ্রামের মল্লিক পরিবার। বর্ধিষ্ণু পরিবার। বাড়ির আত্মীয়, সদস্যসংখ্যাও শতাধিক। করোনা পরিস্থিতির জেরে বাড়ির বাচ্চারা যেমন গতবছর শারোদৎসবে আনন্দ করা থেকে অনেকটা বঞ্চিত ছিল তেমনই ফ্যামিলি গেট টুগেদারও হয়নি। তাই এবার মল্লিক বাড়িতে এক্কেবারে দুর্গাপুজোর আয়োজন। মল্লিক বাড়ি জুড়ে এখন সাজো সাজো রব। শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বাড়ির কচিকাঁচা থেকে শুরু করে যুবক-যুবতীরা। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…
এমনকি বাড়ির প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ারাও এই আয়োজনে সামিল হয়েছেন। মল্লিক বাড়িতে রয়েছে অডিটোরিয়াম হল। সেখানেই পুজোর মন্ডপ গড়ে তোলা হচ্ছে। মন্ডপজুড়ে বনেদিআনার ছাপ। জন্মাষ্টমীতে নদী থেকে তোলা হয়েছে মাটি। তা দিয়েই প্রতিমা শিল্পী গড়ে তুলছেন সাবেকী প্রতিমা। কাগজ, পাখা সহ বিভিন্ন হস্তশিল্পর মাধ্যমে মন্ডপ চত্বরকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত শ্রেয়াণ, তমাল, সায়ন্তনী, ইন্দ্রাণী, প্রীতম, শিল্পী, অনুপম, সাইনিরা। পুজোর অন্যতম আয়োজক বিশিষ্ট সার্জেন সুদীপ্ত মল্লিকের কথায়,”দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতির কারণে বাড়ির ছেলেমেয়েরা যেমন পুজোয় আনন্দ করতে পারেনি তেমনই অনেকদিন গেট টুগেদারও হয়নি। তাই মাসতিনেক আগে হঠাৎই বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজনের ভাবনা আসে। পরিবারের সকলের চেষ্টায় সেই ভাবনা বাস্তবায়নের পথে।”
মল্লিক বাড়ির এই পুজোর আয়োজক সুরধ্বনি কালচারাল কমিটি। সুদীপ্ত বাবু জানান,”আমাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা হয়। বাড়িরই সদস্য-সদস্যা, আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়েই কয়েকবছর আগে আমরা এই কালচারাল ইউনিট গড়ে তুলি। এই কমিটিই পুজোর আয়োজক।” মল্লিক বাড়ি সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চমীতেই মা’য়ের বোধন ঘটবে। পুজোর দিনগুলিতে প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরিবারের সদস্য, আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষীরা গান, নাচ, আবৃত্তির আসরে মেতে উঠবেন।
পাশাপাশি, সপ্তমীতে আমতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতেও বেশ কিছু শিক্ষাসামগ্রী তুলে দেবেন মল্লিক বাড়ির সদস্যরা। বাড়ির বড়ো বৌমা তণিমা ঘোষ মল্লিক। তাঁর কথায়, “বাড়িতে প্রথম দুর্গোৎসব। তাই একটু ব্যস্ত তো বটেই।” তিনি আরও জানান,”প্রায় সব প্রস্তুতই শেষের পথে। এবার মা’য়ের আগমনের জন্য আমরা সকলে মুখিয়ে রয়েছি।” করোনা পরিস্থিতিতে একের পর এক বাড়ির পুজো যখন বন্ধের পথে তখন মল্লিক বাড়িতে এক্কেবারে নতুন করে দুর্গাপুজোর আয়োজন যে অভিনব তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।